আপনার ব্যথা উদ্বেগ ছেড়ে দিন বিশ্বজগতের প্রভুর কাছে : মুফতি মেনক

ধর্ম ও দর্শন সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

অনুবাদ : মাসুম খলিলী

এক. আপনার সহ্য করা প্রতিটি ব্যথার জন্য, আপনার হৃদয় আঁকড়ে থাকা প্রতিটি ভয়ের জন্য, প্রতিটি উদ্বেগের জন্য যা আপনাকে রাতে জাগিয়ে রাখে, প্রতিটি ক্ষতি যার জন্য আপনি শোক করেন, যে কোনো কিছুর জন্য এবং সবকিছুর জন্য যা আপনি পরিচালনা করতে পারবেন না, তা বিশ্বজগতের প্রভুর কাছে ছেড়ে দিন। তিনি সব বিষয়ের সেরা নিষ্পত্তিকারী!

দুই. আপনি কঠোর পরিশ্রম করছেন এবং সর্বশক্তিমান তা জানেন। আপনি আন্তরিক কিনা তা দেখার জন্য তিনি আপনাকে পরীক্ষা করতে থাকবেন; যদি আপনি আপনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন এবং ধৈর্য ধারণ করেন তবে সাফল্য আসবে। সত্যই, এটিই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সন্তুষ্ট যে আপনি আপনার যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।

তিন. প্রত্যেকেরই অন্তরে আপনার জন্য সেরা আগ্রহ নেই। যারা আপনার নিরাময়, আপনার বিকাশ এবং আপনার সাফল্যের জন্য খুশি নন তাদের সন্ধান করুন। কখনও কখনও এ ধরনের অকল্যাণকামী বা বিপক্ষবাদি তারাও হতে পারেন যারা আপনার একবারে নিকটে রয়েছেন আর আপনাকে যারা সমর্থন করবে তারা এমন ব্যক্তিও হতে পারেন আপনার কাছ থেকে যারা সবচেয়ে দূরে রয়েছেন। যারা কল্যাণকর বন্ধনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং তা লালনপালন করে তাদের দিকে মনোনিবেশ করুন।

পূনশ্চঃ

এক. জীবন অনেকটাই ত্যাগ স্বীকার। এটি অনেকখানি বাছাই করার বিষয়। আপনি এখানে সব পেতে পারেন না। তবে যখন আপনি জানেন যে এটি আপনার সৃষ্টিকর্তার জন্য করছেন,তখন তা আরও অর্থবহ হয়ে ওঠে। নিঃসন্দেহে তাঁর প্রতিদানের চেয়ে সেরা পুরস্কার নেই।

দুই. যখন সবকিছু আপনার পথে না যায় তখন হতাশাগ্রস্ত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু মনে রাখবেন যে আমাদের জন্য এই জীবনের প্রকৃতি হলো পরীক্ষা করা হবে। পরিস্থিতি যতই খারাপ হোক না কেন, আগে বা পরে,স্বস্তি আপনার পথে আসবে। হৃদয় থেকে গ্রহণ করুন।

তিন. আপনি কি হাল ছেড়ে দেওয়ার পথে? এটি করবেন না! আপনি কতদূর এসেছেন তা ভাবুন। আপনি যা কিছু করেছেন তা নিয়ে ভাবুন; আপনি ভেবেছিলেন যে এটি করতে পারবেন না আপনি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা করেছেন; সকালে আপনি বিছানা থেকে উঠতে পারবেন না মনে করেছেন কিন্তু যেভাবেই হোক নিজেকে ঠেলে উঠিয়েছেন। সর্বদা সর্বশক্তিমানের কাছে আপনার শক্তি চান।

চার. দৃষ্টিভঙ্গিই সবকিছুর মধ্যে পুরোপুরি পার্থক্য তৈরি করে। আপনি যদি এখন লড়াইয়ে বা কষ্টের মধ্যে থাকেন, আপনার মাথা উচ্চকিত রাখুন, ইতিবাচক চিন্তা করুন এবং হাসিমুখে থাকা অব্যাহত রাখুন, আপনি এগুলি অতিক্রম করে যাবেন। আজ কাউকে বা অন্য কিছুকে আপনার উপর আপতিত হতে দেবেন না। সাফল্য আপনার জন্য নির্ধারিত থাকবে। সর্বশক্তিমানকে বিশ্বাস করুন এবং তাঁর উপর দৃঢ় আস্থাকে সাথে নিয়ে চলতে থাকুন!

পাঁচ. আপনাকে নিয়ে চলাচল করার অবকাশ শয়তানের জন্য বন্ধ করুন। এর মধ্যে আপনার ইবলিসের কৌশলগুলির সাথে পরিচিত হয়ে যাওয়া উচিত। এই অভিশপ্ত আপনাকে সেই পুরানো পাপে ফিরিয়ে নেবে যার জন্য আপনি অনুশোচনা করেছেন এবং সে আপনার মনে সর্বশক্তিমানের করুণা সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি করবে। উদ্দেশ্যের প্রতি মনোযোগী থাকুন। মরিচিকায় আটকাবেন না। সামনে যান এবং আশাবাদকে সঙ্গী করে এগিয়ে চলুন!

ছয়. জীবন যতই কঠোর হয়ে উঠুক না কেন, সর্বশক্তিমান আপনাকে যে সুন্দর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা স্মরণে রাখুন। এটাই হলো আসল ধৈর্য। আপনি ভিতরে যতই ভয়ঙ্কর অনুভবকে সহ্য করে চলেন না কেন আপনি জানেন যে এর অবসান ঘটবে। আপনি কখনই অন্যকে কষ্ট চাপিয়ে দেবেন না অথবা আপনার আচরণের ক্ষেত্রে এসবকে প্রভাব ফেলতে দেবেন না।

দ্রষ্টব্যঃ

সুলাইমানের রাজত্বে শয়তানেরা যা আবৃত্তি করত, তারা তা অনুসরণ করত। অথচ সুলাইমান কুফরী (সত্যপ্রত্যাখ্যান) করেননি বরং শয়তানেরাই কুফরী (অবিশ্বাস) করেছিল। তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত, যা বাবেল শহরে হারূত ও মারূত ফিরিশতাদ্বয়ের উপর অবতীর্ণ করা হয়েছিল। ‘আমরা (হারূত ও মারূত) পরীক্ষাস্বরূপ। সুতরাং তোমরা কুফরী (সত্যপ্রত্যাখ্যান) করো না’ – এ না বলে তারা (হারূত ও মারূত) কাউকেও শিক্ষা দিত না। তবু এ দু’জন হতে তারা এমন বিষয় শিখত, যা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাত। অথচ আল্লাহর নির্দেশ ছাড়া তারা কারো কোন ক্ষতিসাধন করতে পারত না। তারা যা শিক্ষা করত, তা তাদের ক্ষতিসাধন করত এবং কোন উপকারে আসত না। আর তারা নিশ্চিতভাবে জানত, যে কেউ তা (যাদুবিদ্যা) ক্রয় করে, পরকালে তার কোন অংশ নেই। আর তারা যার পরিবর্তে আত্মবিক্রয় করেছে, তা নিতান্তই জঘন্য, যদি তারা তা জানত! (সূরা বাকারা: ১০২)

তোমরা ওই সব লোকের (অর্থাৎ কাফির দুশমনদের) অনুসন্ধানে দুর্বলতা দেখিও না। তোমাদের যদি কষ্ট হয়ে থাকে, তবে তাদেরও তো তোমাদেরই মত কষ্ট হয়েছে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে এমন জিনিসের আশা কর, যার আশা তারা করে না। আল্লাহ জ্ঞানেরও মালিক এবং হিকমতেরও মালিক । (সুরা আন-নিসাঃ ১০৪)

* মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি

* মাসুম খলিলী, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *