আপনার চিন্তাকে পরিশুদ্ধ রাখুন : মুফতি মেনক

ধর্ম ও দর্শন সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

অনুবাদ:মাসুম খলিলী

এক. আপনার চিন্তাকে পরিশুদ্ধ রাখুন। নেতিবাচক চিন্তাভাবনার মাধ্যমে সর্বশক্তিমান আপনার পথে ভাল যা কিছু পাঠিয়েছেন তাকে অবমূল্যায়ন বন্ধ করুন। এই ধরনের চিন্তাভাবনাকে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন। যা কিছু সত্য, সম্মানজনক, ন্যায়, খাঁটি, সুন্দর এবং প্রশংসনীয় তা বলুন এবং তা নিয়ে ভাবুন। ইতিবাচক থাকুন আর আপনার জীবন রূপান্তরিত হবে!

দুই. সবার চোখ এখন রাফায়। লজ্জা করে না তোমার! তুমি তাদের বাড়িতে, হাসপাতালে, অ্যাম্বুলেন্সে, স্কুলে, মসজিদে, বাজারে, খামারে, শরণার্থী শিবিরে, সন্তান প্রসবের সময়, সাদা পতাকা নেড়ে “নিরাপত্তার” জন্য পালিয়ে যাওয়া লোকদের হত্যা করো! বৃদ্ধ, পুরুষ, মহিলা, শিশু, সাহায্যকর্মী, সাংবাদিক এবং সবাইকে। তুমি দখলদারদের জন্য সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছো। আর এখনও নিজেকে শিকার বলে দাবি করো!

পুনশ্চঃ

এক. আপনি যখন ভাল কিছু অর্জন করেন, তখন বিদ্বেষীদের পূর্ণ শক্তিতে বেরিয়ে আসার জন্য প্রস্তুত হন। তারা আপনাকে উপহাস করতে পারে, আপনার সম্পর্কে গুজব ছড়াতে পারে অথবা এমনকি কঠোর শব্দও বলতে পারে। এতে উদ্বিগ্ন হবেন না। যা সঠিক তার উপর ফোকাস করুন এবং চালিয়ে যান। সর্বশক্তিমান আপনার পাশে আছেন।

দুই. আপনি যখন রাস্তাটি দীর্ঘ এবং চ্যালেঞ্জময় দেখছেন তখনও চলা অব্যাহত রাখুন। যখন আপনার খারাপ দিন মনে হয় এবং আপনি হাল ছেড়ে দিতে চান তখনও চালিয়ে যান। যখন আপনার ধৈর্য্য শেষ হয়ে আসছে বলে মনে হয় তখনও চালিয়ে যান। চালিয়ে যান এ কারণে যে সর্বশক্তিমান আপনার লড়াই সম্পর্কে জানেন। যদি কেবলমাত্র আপনি জানতেন যে কি পুরষ্কার আপনার জন্য অপেক্ষা করছে!

তিন. মূল কথা হল আপনাকে অনুপ্রাণিত করতে এবং জীবনে আপনাকে গড়ে তোলার জন্য আপনি সত্যি সত্যিই লোকদের উপর নির্ভর করতে পারবেন না। সত্য হল প্রত্যেকেই তাদের নিজের জীবনে এতটাই আচ্ছন্ন যে তাদের কাছে অন্যদের জন্য খুব বেশি বা কোন সময়ই নেই। নিজেকে উৎসাহিত করতে শিখুন। তবে সর্বশক্তিমানকে সমীকরণের বাইরে রাখবেন না।

চার. যখনই আপনার জীবনে একটি দরজা বন্ধ হয়, এর মানে হলো সর্বশক্তিমান চান যে আপনি এগিয়ে যান। সামনে যেতে থাকুন, ফিরে তাকাবেন না। তিনি আপনার পদক্ষেপের নির্দেশনা দিচ্ছেন। আপনার তাকে বিশ্বাস করতে হবে। পরিবর্তন কখনোই সহজ নয়। অজানা কিছু অস্থিরতাপূর্ণ হতে পারে। কিন্তু তিনি আমাদের রিযিকের মালিক; অতত্রব কেন এতো চিন্তা করবেন?

পাঁচ. সর্বশক্তিমান। আমাদের চারপাশে যা কিছু চলছে তাতে আমাদের বিচলিত না হবার তৌফিক দিন। ব্যর্থতা, হতাশা এবং ক্লান্তিতে ফোকাস করা সহজ। কিন্তু তার দরকার আমাদের নেই। পরিবর্তে, আমাদের একবারে একটি পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করুন কারণ আমরা জানি যে আপনি সবকিছুর উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছেন। আমরা যেন আপনার ডিক্রির কাছে নিজেদের সমর্পণ করতে পারি। আমীন।

দ্রষ্টব্য:

হে মুমিনগণ! তোমাদের কাছে যদি কোনো ফাসেক ব্যক্তি কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তা যাচাই করো। অজ্ঞতাবশত কোনো গোষ্ঠীকে আক্রান্ত করার আগেই, (না হলে) তোমরা কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে। (সূরা হুজুরাত:৬)

তোমরা পরস্পরের দোষচর্চা কোরো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? নিশ্চয়ই তোমরা তা অপছন্দ করবে। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (সূরা হুজুরাত:১২)

যখন তাদের কাছে নিরাপত্তা বা ভয়ের কোনো সংবাদ পৌঁছে, তখন তারা তা প্রচার করে। যদি তারা তা (সংবাদটি) রাসুল বা তাদের দায়িত্বশীল ব্যক্তির দৃষ্টিগোচর করত, তবে তাদের (দায়িত্বপ্রাপ্ত) অনুসন্ধানকারীরা তার যথার্থতা নির্ণয় করতে পারত। তোমাদের প্রতি যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত না থাকত, তবে সামান্যসংখ্যক ব্যতীত সবাই শয়তানের অনুসরণ করত। (সূরা নিসা:৮৩)

যে ব্যক্তি কোনো ভুল করে কিংবা কোনো পাপ করে অতঃপর কোনো নির্দোষ ব্যক্তির প্রতি অপবাদ আরোপ করে, সে জঘন্য মিথ্যা ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে। (সূরা নিসা:১১২)

হজরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন,কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে কোনো কথা শোনামাত্রই (তার সত্যতা যাচাই না করেই) মানুষের কাছে বলে বেড়ায়। (আবু দাউদ:৪৯৯২)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে বলা হয়েছে,শয়তান মানুষের রূপ ধরে তাদের কাছে আসে এবং তাদের মিথ্যা কথা শোনায়। অতঃপর লোকজন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের কেউ বলে, আমি এমন এক ব্যক্তিকে এ কথা বলতে শুনেছি, যার চেহারা চিনি, কিন্তু নাম জানি না। ’ (সহিহ মুসলিম)

* মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি

* মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *