অ্যাসাঞ্জের মুক্তি ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য বিশাল বিজয়’

আমেরিকা প্রবন্ধ-কলাম যুক্তরাজ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

সাঈদ চৌধুরী

দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ অবেশেষে মুক্তি পেয়েছেন। ২০০৬ সালে উইকিলিকস ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০১০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে সাড়া জাগিয়েছিলেন মি. জুলিয়ান। ইরাক ও আফগানিস্তানে আমেরিকান যুদ্ধের গোপন তথ্যসমূহ ফাঁস হওয়ায় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তখন হৈচৈ শুরু হয়েছিল।

‘এক্স’ অ্যাকাউন্টে উইকিলিকস লিখেছে, ১৯০১ দিন বন্দী থাকার পর যুক্তরাজ্যের কারাগারের একটি ছোট্ট কক্ষ থেকে সোমবার জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ছাড়া পেয়েছেন।

ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ জার্নালিস্ট জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের কারাগার থেকে মুক্তিকে “গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য তথা বিশাল বিজয়” বলে বর্ণনা করেছে। ফেডারেশনের সভাপতি ডমিনিক প্রদালি বলেন, এটা “বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের বিজয়”। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যান্থনি বেলাঞ্জার যোগ করেছেন, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিচারের চেষ্টা সাংবাদিকদের উপর একটি অন্ধকার ছায়া ফেলেছিল, বিশেষ করে যারা জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়গুলি কভার করে।

ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস’র সাধারণ সম্পাদক মিশেল স্ট্যানিস্ট্রিট বলেছেন, সাংবাদিকদের এভাবে টার্গেট এবং নিপীড়ন সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা-সহ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আমাদের যা যা করা দরকার তা করতে হবে এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ যেকোন প্রচেষ্টার প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে হবে।

গোপন নথি ফাঁসের পর অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করে যুক্তরাষ্ট্র। গ্রেফতার এড়াতে এক পর্যায়ে মি. অ্যাসাঞ্জ লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয়ে নেন। ৫২ বছর বয়সী অ্যাসাঞ্জকে ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের পুলিশ গ্রেফতার করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুক্তি দিয়ে আসছে, মি. অ্যাসাঞ্জের প্রতিষ্ঠান উইকিলিকস ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধের বিষয়ে এমন কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে, যা অনেক মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলেছে।

এ ঘটনার জেরে মি. অ্যাসাঞ্জের অন্যতম সহযোগী মার্কিন সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষক চেলসি ম্যানিংকে ৩৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তথ্য ফাঁসের অভিযোগে মার্কিন সরকারের মামলা ছাড়াও সুইডেনে মি. অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের পৃথক অভিযোগ তোলা হয়।

এক সময় মি. অ্যাসাঞ্জের স্ত্রী স্টেলা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বাইডেন প্রশাসনের উচিত “লজ্জাজনক এই বিচার” থেকে নিজেকে দূরে রাখা। এরপর অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে মার্কিন সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছিল যে, তারা যেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম প্রত্যাহার করেন। গত এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়া সরকারের ওই অনুরোধ বিবেচনা করে দেখছেন।

দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, দ্য গার্ডিয়ান ও বিবিসির সুত্র মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সমঝোতার ধারাবাহিকতায় তাকে ছেড়ে দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। এখন নিজের দেশ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাবেন বলে যুক্তরাজ্যের বিচার বিভাগের একটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সিবিএসের খবরে বলা হয়েছে যে, অ্যাসাঞ্জকে কারাগারে পাঠানো হবে না। বরং এতদিন তিনি যে কারাভোগ করেছেন, সেটির জন্য ক্ষতিপূরণ পাবেন।

‘এক্স’ পোস্টে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের সমর্থকদের বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন তার স্ত্রী স্টেলা মরিস অ্যাসাঞ্জ। বছরের পর বছর তারা পাশে থেকেছেন বলেই মি. অ্যাসাঞ্জের মুক্তি ত্বরান্বিত হয়েছে বলে স্টেলা মরিস উল্লেখ করেছন।

* সাঈদ চৌধুরী সময় সম্পাদক, কবি ও কথাসাহিত্যিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *