অসত্য গল্প শান্তিপূর্ণভাবে মোকাবিলা করুন : মুফতি মেনক

ধর্ম ও দর্শন সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

অনুবাদ:মাসুম খলিলী

এক. ভন্ডরা পরচর্চা করতে ভালোবাসে, তারা অন্য সবাই কী করছে তা জানতে ভালোবাসে। এটি যথেষ্ট সরস না হলে তারা রস কস মিশিয়ে গসিপও করতে পারে। আপনি যখন অসত্য গল্পের বিষয় হয়ে থাকেন তখন এটি কষ্টদায়ক ও বিরক্তিকর হতে পারে। শান্তিপূর্ণভাবে এসব মোকাবিলা করুন এবং তাদের জন্য প্রার্থনা করুন।

দুই. সর্বশক্তিমান পরাক্রমশালী কতটা দয়াবান! আপনি যখন কোনো পাপ করে ফেলেন, তখন এটি একটি পাপ হিসেবে রেকর্ড করা হয়। আর যদি আপনি কোনো ভালো কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেন, তবে এটি সম্পন্ন না হলেও এটি পুণ্য হিসেবে রেকর্ড করা হয়ে থাকে। আর আপনি যখন বাস্তবে সেটি করেন, তখন এর জন্য দশটি পুণ্য রেকর্ড করা হয়!

পূনশ্চঃ

এক. জীবনকে জটিল করবেন না। এটি আসলে খুবই সোজা-সাপটা। আপনি যা দিবেন, শেষ পর্যন্ত তাই আপনার কাছে ফিরে আসবে। আপনি যা বপন করবেন, তাই আপনি কাটবেন। সদাচারণ ও দয়ার বিস্তার ঘটান, এটি আবার আপনার কাছেই নানা রূপে ফিরে আসবে। সর্বশক্তিমান সৎকর্মশীলদের পছন্দ করেন। আপনি এখনো কিসের জন্য অপেক্ষা করছেন? শুরু করুন আজ থেকেই!

দুই. যখন আপনি বিশ্বাস করেন এবং আস্থা রাখেন যে, আপনি যা কিছুর মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন সব কিছুতেই সর্বশক্তিমান আপনার সাথে রয়েছেন, এটাই হলো ঈমান, বিশ্বাস! তখন আপনার জীবন আরো প্রশান্ত এবং কম চাপমুক্ত হয়ে ওঠে, কারণ আপনি জানেন, তিনি আপনাকে জীবনের ভালো সময় এবং খারাপ সময়গুলোর মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

তিন. বেশিরভাগ দুর্দান্ত পরিবর্তন বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে ঘটে। সুতরাং আপনি যদি এখনই মনে করেন যে আপনার জীবনটি গোলমেলে হয়ে পড়েছে, তবে এখনই মনোযোগ দিন। বিশ্বাস করুন যে, এটি শীঘ্রই কার্যকর হবে। জেনে রাখুন যে সেরা পরিকল্পনাকারী যেটি প্রকাশ করবেন আপনার অবশ্যই সেটিই নেয়া উচিৎ । আপনি সন্তুষ্ট হবেন যে আপনি হাল ছাড়েন নি!

চার. আন্তরিকতার আসল পরীক্ষা হল একজন ব্যক্তি আপনাকে সাহায্য করবে কিনা তা দেখা যদিও সে জানে যে সে আপনার কাছ থেকে বিনিময়ে কিছুই পাবে না। সত্য হল যে কেউ সাহায্য করতে পারে যখন বিনিময়ে লাভ হবার মতো কিছু থাকে; কিন্তু যখন পাওয়ার কিছু নেই তখন সাহায্য করায় সত্যিকারের ভালবাসা এবং একটি সুন্দর হৃদয়ের প্রতিফলন ঘটে।

পাঁচ. সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত লোকেরা আপনাকে হতাশ করার জন্য প্রস্তুত থাকুন। এটা কোনো না কোনো পর্যায়ে ঘটতে বাধ্য। এই সবের মধ্যে, নিজে থাকুন এবং যতটা সম্ভব ভাল কাজ ছড়িয়ে দিন তবে সবার কাছ থেকে বিনিময়ে ভাল আশা করবেন না।

ছয়. অন্যের জন্য প্রার্থনা করুন। যখন আপনি নিরাশ বোধ করেন তখন প্রার্থনা করুন। আপনি যখন আশাবাদী হন তখনও প্রার্থনা করুন। সব পরিস্থিতিতেই প্রার্থনা করুন। প্রার্থনা শক্তিশালী। প্রার্থনা করুন এবং সর্বশক্তিমানকে বাকী কাজ করতে দিন। তিনি সর্বময় ক্ষমতাশালী। তিনি জানেন, তিনি শুনেন, তিনি দেখেন, তিনি যত্ন নেন। আপনি কখনোই একা নন। তিনি সর্বদা আপনার জন্য পাশে রয়েছেন।

সাত. তিনি আমাদের প্রতিটি নতুন দিনের জন্য যখন মুখোমুখি হতে দেন তার জন্য প্রতিদিনই সর্বশক্তিমানকে ধন্যবাদ জানানোর কথা মনে রাখবেন। মাঝে মাঝে আমরা ভুলে যাই যে তাজা বাতাসের নতুন এক একটি শ্বাস তাঁর এক একটি আশীর্বাদ। এই জিনিসগুলিকে নিশ্চিতভাবে গ্রহণ করার জন্য সর্বশক্তিমান যেন আমাদের ক্ষমা করেন। আমরা সর্বদা যেন আমাদের আশীর্বাদগুলিকে স্মরণ করি এবং প্রতিদিন এসব হিসাব করার জন্য যেন নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারি।

আট. সুখ এবং স্বাচ্ছন্দ্যের মতোই আপনার জীবনে কষ্ট আর সংগ্রামও থাকবে। এটিই হলো এই জীবনের প্রকৃতি। কঠিন সময়গুলোকে কোনোভাবেই গ্রাস করতে দেবেন না আপনাকে। জীবনের ভালো জিনিসগুলোতে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করুন। এটি আপনার কাছে যা কিছু আছে তার জন্য প্রশংসা করতে আপনাকে সহায়তা করে। সর্বোপরি, আপনার হৃদয় এবং আপনার অন্তরকে হেফাজত করুন!

দ্রষ্টব্য:

অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার মন তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয়, তা আমি জানি। আমি তার ঘাড়ে অবস্থিত ধমনী অপেক্ষাও নিকটতর। যখন দুই সংগ্রাহক (ফিরিশতা তার কর্ম) সংগ্রহ (লিপিবদ্ধ) করে, (যারা তার) ডাইনে ও বামে বসে আছে। মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে (তা লিপিবদ্ধ করার জন্য) তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে।

মৃত্যুযন্ত্রণা সত্যই আসবে; এ তো তাই, যা হতে তুমি অব্যাহতি চেয়ে আসছ। আর শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে, ওটাই শাস্তির প্রতিশ্রুতির দিন। সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি উপস্থিত হবে, তার সাথে থাকবে এক চালক ও সাক্ষী। তুমি এই দিবস সম্বন্ধে উদাসীন ছিলে, এখন তোমার সম্মুখ হতে পর্দা উন্মোচন করেছি; সুতরাং আজ তোমার দৃষ্টি প্রখর।

তার সঙ্গী (ফিরিশতা) বলবে, ‘এই তো আমার নিকট (আমলনামা) প্রস্তুত।’ (আদেশ করা হবে,) তোমরা উভয়ে নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক উদ্ধত অবিশ্বাসীকে। কল্যাণকর কাজে প্রবল বাধাদানকারী, সীমালংঘনকারী ও সন্দেহ পোষণকারীকে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্য গ্রহণ করত, তাকে কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর। তার সহচর (শয়তান) বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমি তাকে অবাধ্য হতে প্ররোচিত করিনি। বস্তুতঃ সে নিজেই ছিল ঘোর বিভ্রান্ত।’

আল্লাহ বলবেন, তোমরা আমার সামনে বাক-বিতণ্ডা করো না; আমি তো তোমাদেরকে আগেই সতর্ক করেছিলাম। আমার কথার রদ-বদল হয় না এবং আমি আমার বান্দাদের প্রতি কোন অবিচার করি না।’ সেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করব, ‘তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ?’ জাহান্নাম বলবে, ‘আরো আছে কি?’
আর জান্নাতকে নিকটস্থ করা হবে সাবধানীদের জন্য; কোন দূরত্ব থাকবে না। এরই প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছিল; প্রত্যেক (আল্লাহ)-অভিমুখী, (তাঁর হুকুমের) হিফাযতকারীর জন্য। যারা না দেখে পরম দয়াময়কে ভয় করে এবং (আল্লাহ)-অভিমুখী চিত্তে উপস্থিত হয়। (তাদেরকে বলা হবে,) শান্তির সাথে তোমরা তাতে প্রবেশ কর; এটা অনন্ত জীবনের দিন। (সূরা ক্বাফ: ১৬-৩৪)

* মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি

* মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *