অনুবাদ:মাসুম খলিলী
এক. কিছু লোকের সাথে ডিল করা বেশ কঠিন হতে পারে। তারা তাদের কথা এবং কাজ দ্বারা আপনাকে আঘাত করবে। শুধু রাগ করা এবং আপনার জীবন থেকে তাদের বিদায় করা সহজ। কিন্তু অনেক সময় আপনি তা পারেন না। তারা পরিবারের সদস্য হতে পারেন। মনে রাখবেন, তারা সর্বশক্তিমানের পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা। আপনি কি ধৈর্য ধরবেন না?
দুই. আমাদের বড় বেশি অভিযোগ করার প্রবণতা রয়েছে। আমাদের কাজ যেন খুবই কঠিন। আমাদের বাবা-মায়ের চাহিদা খুব বেশি; আমাদের বাচ্চারা খুব দুষ্টু; এভাবে অভিযোগ করতে থাকা কখনও ভাল কিছু বয়ে আনে না। এটি আপনার এবং আপনার আশেপাশের লোকদের শক্তি কমায়। ইতিবাচকতার সন্ধান করুন। দেখবেন আপনি অনেক বেশি সুখী মানুষ।
তিন. যা কাজ করেনি তাকে বিদায় দিন এবং বাস করবেন না গতকালের মানসিকতায়। আপনি যা চান তা অর্জন করতে কঠোর পরিশ্রম করুন। কোন কিছুই সহজে আসে না। সর্বশক্তিমান আপনাকে অনেক কিছু দিয়েছেন, সুতরাং আপনার যে কর্মক্ষমতা রয়েছে তা ব্যবহার করুন এবং আপনার হাত কাদাময় করতে ভয় পাবেন না। কঠোর পরিশ্রম কখনও কাউকে নিঃশেষ করেনি!
পূনশ্চঃ
এক. আপনি হয়তো অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছেন। কিন্তু আপনি কিছুই ঘটতে দেখছেন না। মনে রাখবেন, পর্দার আড়ালে অনেক কিছু ঘটে। সর্বশক্তিমান সমগ্র সৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করেন। কেন আপনি সন্দেহ করছেন যে তিনি আপনার সমস্যার সমাধান করতে পারেন না?
দুই. আপনার সাথে কে অন্যায় করেছে এবং কে অন্যায্য আচরণ করেছে সে সম্পর্কে অভিযোগ করা এড়িয়ে চলুন। আপনাকে জীবনের পাঠ শেখানোর জন্য এটি সর্বশক্তিমানের পরিকল্পনার অংশ; সেজন্য তিনি এ সুযোগ দিয়েছেন। একবার আপনি সেগুলি শিখলে, আপনি নতুন সুযোগের জন্য প্রস্তুত হবেন। তিনি আপনার জন্য নতুন দরজা খুলে দেবেন।
তিন. গড্ডালিকায় চলার মানসিকতা থেকে দূরে থাকুন। অন্য সবাই এটা করছে বলে আপনি কেন তা করবেন? সবকিছুর সাথে নিজেকে মানানসই করার দরকার নেই। মনে রাখবেন, দিনের শেষে, ভিড়ের সাথে ভুল পথে যাওয়ার চেয়ে একা হাঁটাই ভাল।
চার. স্বস্তিকর অঞ্চল থেকে আপনাকে সরিয়ে দেয় এমন যে কোনও কিছুই অস্বস্তিকর। বিকাশ হলো এমন কিছু যেখানে আপনি এর আগে কখনও ছিলেন না এবং আপনি নতুন কোনও কিছুর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে যাচ্ছেন। আপনি আপনার এই সংস্করণটি কখনও দেখেননি। প্রবৃদ্ধি বা বিকাশ হলো এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায়। সুতরাং নিজের প্রতি সদয় হন; তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করুন!
পাঁচ. আপনি শুধু ভালো কাজ করেছেন বলেই এটি নিয়ে বড়াই করবেন না। সব সময় নম্র থাকুন। আমাদের চার পাশে সব খারাপ ঘটনা চলতে থাকা সত্ত্বেও, সর্বদা আপনার মনে আশা রাখুন। আর দয়া এবং উদারতা যাই হোক না কেন, এটাই বাঁচার একমাত্র উপায়! ভালো কাজের দিকে পরিচালিত করে আপনাকে অনুগ্রহ করার জন্য সর্বশক্তিমানকে ধন্যবাদ জানান।
ছয়. আপনি শারীরিকভাবে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ব্যক্তি হতে পারেন তবে যদি আপনার হৃদয়ে হিংসাকে লালন করেন তবে আপনি অসুস্থ। এ থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত আপনি সর্বদা অসুস্থই থাকবেন। আর বিশ্ব আপনার দৃশ্যমান উপস্থিতিকে বিচার করে। সর্বশক্তিমান বিচার করেন আপনার অন্তরকে। নিজেকে কখনোই অন্য কারো সাথে তুলনা করবেন না। আপনি বিশেষ একজন। কারণ তিনিই আপনাকে তৈরি করেছেন।
দ্রষ্টব্য:
আমি (রাসুল সা.) তোমাদেরকে এ কথা বলছি না যে, আমার নিকট আল্লাহর সব ধন ভান্ডার রয়েছে এবং আমি (এ কথা বলছি না যে আমি) অদৃশ্যের সব কথা জানি। আর আমি এটাও বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আর যারা তোমাদের চোখে হীন; আমি তাদের সম্বন্ধে এটা বলতে পারি না যে, আল্লাহ কখনও তাদের কোনো নেয়ামত দান করবেন না। তাদের অন্তরে যা কিছু আছে তা আল্লাহ উত্তমরূপে জানেন, আমি তো এরূপ বললে অন্যায়ই করে ফেলব। (সূরা হুদ:৩১)
(হে মুহাম্মাদ) আপনি ঘোষণা দিন, আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন, তা ছাড়া আমার নিজের ভালো-মন্দ, লাভ-ক্ষতি ইত্যাদি বিষয়ে আমার কোনো অধিকার নেই। আমি যদি অদৃশ্যের বিষয় ও সংবাদ জানতাম তবে আমি অনেক কল্যাণ লাভ করতে পারতাম আর কোনো অমঙ্গল ও অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করতে পারত না। (অদৃশ্যের কোনো খবরই আমি রাখি না)। আমি শুধু মুমিনদের জন্য একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদবাহী।’ (সুরা আরাফ:১৮৮)
একমাত্র আল্লাহ গায়েবের খবর জানেন। তিনি কারও কাছে নিজ গায়েব প্রকাশ করেন না। তবে যখন তিনি কোনো নবী-রাসুলকে মনোনীত করেন তখন ওহি মারফত কিছু অদৃশ্যের সংবাদ জানিয়ে থাকেন।’ (সুরা জিন:২৬-২৭)
রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো গণকের কাছে আসল, তারপর তাকে ভাগ্য সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাস করল এবং গণকের কথাকে সত্য বলে বিশ্বাস করল তাহলে চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হবে না।’ (মুসলিম:২২৩)
* মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি
