অন্যদের নিয়ে অভিযোগকারীদের সাহচর্য এড়িয়ে চলুন : মুফতি মেনক

ধর্ম ও দর্শন মতামত
শেয়ার করুন

অনুবাদ: মাসুম খলিলী

এক. জীবনের চলার পথে যাদের সাথে আপনার দেখা হয় তাদের প্রতি সর্বদা সদয় হন। মনে রাখবেন,আমরা সবাই বেড়াতে এসেছি। আপনার যাত্রা আমার মতো নয়। আর আমার যাত্রা আপনার মতো নয়। আমরা যদি কোনও নির্দিষ্ট পথে দেখা করি তবে যেন একে অপরকে উৎসাহিত করি এবং একে অপরকে হেয় করার পরিবর্তে উচ্চকিত করার চেষ্টা করি।

দুই. যারা ক্রমাগতভাবে অন্য লোকদের সম্পর্কে অভিযোগ করে চলে তাদের সাহচর্য এড়িয়ে চলুন। তারা তাদের অসন্তুষ্টি আড়াল করার জন্য কোন প্রচেষ্টাই নেয় না। হতাশার গর্তে আপনাকে টেনে নামানোর সুযোগ তাদের দেবেন না। তাদের কাছ থেকে দূরে থাকুন তবে তাদের উপলব্ধি করতে দিন যে তারা নিজেরাই তাদের অসন্তোষের উৎস!

পূনশ্চঃ

এক. হে আল্লাহ! ফিলিস্তিনের জনগণকে রক্ষা করুন এবং তাদের সান্ত্বনা দিন। তাদের কষ্ট ও দুর্দশা লাঘব করুন। অশান্তি ও ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও তাদের হৃদয় শান্ত করুন। তাদের কয়েক দশকের নিপীড়ন ও কষ্টের দ্রুত অবসান দান করুন। তাদের প্রাপ্য বিজয় দান করুন। আমীন।

দুই. সর্বশক্তিমান যা করতে পারেন তা নিয়ে কখনও সন্দেহ করবেন না। বিশ্বজগতের প্রভু চোখের পলকে সবকিছু পরিবর্তন করতে পারেন। তাই আপনার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে চাপ নেবেন না। আপনি যা হারিয়েছেন তা তিনি প্রতিস্থাপন করতে পারেন। তিনি হঠাৎ এমন দরজা খুলতে পারেন যা আপনি কখনও স্বপ্নেও খুলবেন না। আপনার কাজ হল তাকে বিশ্বাস করা।

তিন. এমনকি যদি আপনার সামনে সমস্ত দরজাই বন্ধ মনে হয় এবং আপনি সড়কের শেষ প্রান্তে এসে গেছেন বলে মনে করেন, তবে সর্বশক্তিমান আপনার সমস্যার বিকল্প কোন সমাধান করতে পারেন। তাঁর পরিকল্পনা উপলব্ধি করুন। নতুন সুযোগের সন্ধান শুরু করুন। প্রায়শই আমরা বন্ধ দরজাগুলিতে এমনভাবে ঝুলে থাকি যে সেখানে কী আছে তা আমরা দেখতে ব্যর্থ হই!

চার. আপনি যখন তাদের খুঁজে পেয়েছেন তার চেয়ে ভাল অবস্থায় ছেড়ে দিন। খুশি হোন, সাহায্যের হাত বাড়ান, ভাল শব্দ ব্যবহার করুন; যা প্রয়োজন হয় তা করুন। সম্ভব হলে আপনার পথের বাইরে গিয়েও সাহায্য করুন। আপনি তাদের ছেড়ে যাওয়ার অনেক পর পর্যন্ত তারা আপনাকে মনে রাখবে। ভালো কাজ করার তরঙ্গপ্রভাব এইরকম। এই ধরনের কোন কাজ যত ছোটই হোক না কেন সেটাকে কখনই ছোট করে দেখবেন না।

পাঁচ. মনে রাখবেন, সর্বশক্তিমান রাস্তাটিকে আমাদের চেয়ে বেশি স্পষ্টভাবে দেখতে পারেন। তিনি আমাদের অস্তিত্বের প্রতিটি দিকের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছেন। সুতরাং যখন তিনি আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সংকেত দেখান, তখন তা করুন। তাঁর উপর আস্থা রাখুন। হেদায়েত বা সত্য পথের জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে থাকুন। তিনি আমাদের সেরা অভিভাবক ও রক্ষক।

ছয়. সর্বশক্তিমান। পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়া প্রত্যেককে স্বাচ্ছন্দ্য দান করুন। তারা এই নতুন দিনের মুখোমুখি হোক তাদের হৃদয়ে আশা নিয়ে। আপনি এই মুহূর্তে প্রত্যেকের কাঁধে থাকা ভারী বোঝা হালকা করুন। তাদের মনে রাখতে সাহায্য করুন যে এটিও অতিক্রান্ত হবে এবং কোন কিছুই স্থায়ী হয় না।

দ্রষ্টব্যঃ

প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে এবং তোমাদের সকলকে কিয়ামতের দিন (তোমাদের কর্মের) পূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে। তখন যাকেই জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই প্রকৃত অর্থে সফলকাম। আর এই পার্থিব জীবন তো প্রতারণার উপকরণ ছাড়া কিছু নয়। (সূরা আলে ইমরান : ১৮৫)

নিশ্চয় মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে সফলতা। উদ্যানরাজি ও আঙুর, সমবয়সী নব যৌবনা তরুণী এবং ছলকানো পান-পাত্র। সেখানে তারা কোনো অহেতুক কথা শুনবে না এবং কোনো মিথ্যা কথাও না। এসব হবে তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে পুরস্কার, (আল্লাহর) এমন দান, যা মানুষের কর্ম হিসাবে দেওয়া হবে। সেই প্রতিপালকের পক্ষ থেকে, যিনি আকাশম-লী, পৃথিবী ও এর মধ্যবর্তী সবকিছুর মালিক, দয়াময়। (সূরা নাবা : ৩১-৩৭)

যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করা হোক এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হোক, তার কাছে যেন এমন অবস্থায় মৃত্যু আসে, যখন সে আল্লাহ ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এবং সে যেন মানুষের সাথে এমন আচরণ করে, তার প্রতি অন্যের যেমন আচরণ সে পছন্দ করে। (সহীহ মুসলিম: ১৮৪৪)

* লেখক: মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি * অনুবাদ: মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *