কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানুষকে ভেবেছিলেন স্রষ্টার প্রতিরূপ। তিনি মানুষের ওপর আস্থা রাখতে বলেছিলেন। এটা কেবল রবীন্দ্রনাথের কথা নয়, ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন নবী মূসা (জন্ম: খ্রিস্টপূর্ব-১,৫৭১সাল) বলেছেন, ‘মানুষকে সেবা করলে সে সেবা লাভ করেন স্বয়ং ‘ইশ্বর’।
কিন্তু ‘চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনি’। অপশাসন চাপিয়ে দেওয়া ও বিনাবিচারে লাখো নিরীহ মানুষকে হত্যার জন্য দায়ী স্বৈরশাসকের পলায়নের পর তার বাংলাদেশে তার অনুসারীদের জানমালের ওপর যা ঘটছে — রাস্তায় পিটিয়ে, বাড়িতে আগুন লাগিয়ে হত্যা করা, হিন্দুদের মন্দির ধ্বংস ও তাদের বাড়িঘর-দোকানপাট লুণ্ঠনের মতো কাজ নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য।
আল্লাহ বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি কোনো একজনকে হত্যা করল সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্যা করলো। আর যে ব্যক্তি কারো প্রাণ রক্ষা করল সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করলো’ (সূরা মায়িদা : ৩২)
স্বৈরশাসকের পতনে বিজয়োৎসব হতেই পারে। নিপীড়কের অবর্ণনীয় পীড়ন থেকে মুক্তির স্বস্তিতে আনন্দ প্রকাশ স্বাভাবিক। সন্দেহ নেই, গত ১৫ বছর ধরে শাসকের আস্কারায় তার অনুগামীরা বাড়াবাড়ি করেছে। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য দুনিয়ার সকল অযোগ্য শাসক সকল যুগে চাটুকার ও সুবিধাভোগী সৃষ্টি করেছে। এহেন চাটুকার-মোসাহেবরা ‘পোপের চেয়ে বড় খ্রিস্টান’ হয়ে যান।
রবীন্দ্রনাথ এক্ষেত্রেও বলেছেন: ‘রাজা যত বলে পারিষদ-দলে বলে তার শতগুণ’। তারাও জানতো না যে, যে দেবীর পূর্জা অর্চনা তারা করছেন, তিনি তাদের জান বাঁচাতে ‘বুকের তাজা রক্ত ঢেলে’ দেওয়ার জন্য রংপুরের অসম সাহসী তরুণ আবু সাঈদের মতো বুক পেতে দেবেন না। তিনি পালিয়ে যাবেন।
জীবন দেয় নিরীহ মানুষ। শাসক বিপদ দেখলেই নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জান বাঁচাতে ‘সেফ এক্সিট’ চায়, ইদি আমিনের মতো পালিয়ে যায়। এরা স্বৈরশাসক সাদ্দাম, গাদাফির মতো দেশের অভ্যন্তরে অবস্থান করে বিচারের মুখোমুখি হওয়া বা অনিবার্য মৃত্যু মেনে নেয়ার মতো সাহসী নয়।
বি. দ্র: বিজয়ের জন্য আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করুন। আইন হাতে তুলে না নিয়ে। যারা অন্যায় করেছে, তাদের অন্যায়ের ফর্দ তৈরি করে তাদেরকে আইন রক্ষাকারী সংস্থার হাতে সোপর্দ করুন। ইসলামে সংখ্যালঘুদের আমানত হিসেবে দেখতে বলা হয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে সংখ্যালঘুদের ইজ্জত একজন মুসলমানের ইজ্জত আবরুর মতই গণ্য। সকল সৃষ্ট জীবই আল্লাহর বৃহত্তর পরিবার’। অতএব তাদের ধর্মীয় স্থাপনা, বাড়িঘর-সম্পত্তি, জীবন ও সম্ভ্রম রক্ষাকে সামাজিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করুন। শেষাবধি দেশটা তো আমাদেরই।
* আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু উপদেষ্টা সম্পাদক- উইকলি বাংলাদেশ, নিউ ইয়র্ক। সাবেক সম্পাদক- মাসিক নতুন ঢাকা ডাইজেস্ট