অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ গ্রহণ আজ বৃহস্পতিবার বিকালে অথবা সন্ধ্যায় হতে পারে বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান। তিনি বলেন, ”অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে ড. ইউনূস আগামীকাল দায়িত্ব নেবেন। তিনি দুপুরে এসে পৌঁছাবেন, আমি তাকে রিসিভ করবো।”
”আগামীকাল বিকালে বা রাত ৮টা নাগাদ শপথ গ্রহণ হতে পারে।” অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আপাতত ১৫ জন সদস্য থাকতে পারে বলে তিনি আভাস দেন। দেশে পুলিশের যে অনুপস্থিতি রয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি সেই সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি মনে করেন। বিভিন্ন স্থানে যারা ভাঙ্গচুর ও সহিংস ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে্ও তিনি জানান।
কোনো প্রকার ভুলের কারণে আমাদের এই বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়: ড. ইউনূস
দেশবাসীর উদ্দেশে একটি বার্তা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জন্য মনোনীত হওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ইউনূস সেন্টারের পাঠানো এক প্রেস রিলিজে তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, “আমি সাহসী ছাত্রদের অভিনন্দন জানাই, যারা আমাদের দ্বিতীয় বিজয় দিবসকে বাস্তবে রূপ দিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং অভিনন্দন জানাই দেশের আপামর জনসাধারণকে, যারা ছাত্রদের এই আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন।”
নতুন এই বিজয়ের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার নিশ্চিতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস বলেছেন, “আমাদের কোনো প্রকার ভুলের কারণে আমাদের এই বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়। আমি সবাইকে বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে এবং সব ধরনের সহিংসতা এবং স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি।”
ছাত্র-দলমতনির্বিশেষে সবাইকে শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ জানান তিনি, “আমাদের প্রিয় এই সুন্দর ও বিপুল সম্ভাবনাপূর্ণ দেশটিকে আমাদের নিজেদের ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রক্ষা করা এবং একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এখন আমাদের প্রধান কাজ। একটি নতুন পৃথিবী বিনির্মাণে আমাদের তরুণেরা প্রস্তুত। অকারণ সহিংসতা করে সুযোগটি আমরা হারাতে পারি না।”
সব ধরনের সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান ড. ইউনূস বলেছেন, অনুগ্রহ করে নিজে শান্ত থাকুন এবং আপনার আশপাশের সবাইকে শান্ত থাকতে সহায়তা করুন।
ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশের পথে রওনা দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইঊনূস
ড. মুহাম্মদ ইঊনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন, এই তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে বিশেষ নিরাপত্তা দিয়েছে ফ্রান্সের বিশেষ বাহিনী।
ড. ইউনূস বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটার দিকে বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবেন বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। এরপর রাত ৮টায় শপথ অনুষ্ঠান হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন। ‘আমি আশা করছি তিনি সুন্দরভাবে সবকিছু সফলভাবে সমাধা করতে পারবেন’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে’ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অত্যন্ত সফলভাবে তার কাজ সমাধান করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান।
আগামীকাল রাতে শপথ গ্রহণ হতে পারে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন তিনি। বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে মি. জামান বলেন, “কাল শপথ গ্রহণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। বিকালে করার প্রস্তাব ছিল, কিন্তু খুব টাইট হয়ে যাবে। রাত আটটা নাগাদ হতে পারে। উনি দুপুর দুইটা দশে আসবেন। ৪০০ জন লোকের উপস্থিতি এখানে থাকবে”।
অধ্যাপক ইউনুসের সাথে কথা হয়েছে জানিয়ে মি. জামান বলেন, “আমরা সব ধরনের সহায়তা করবো। আমি আশা করছি তিনি সুন্দরভাবে সবকিছু সফলভাবে সমাধা করতে পারবেন। তিনি আমাদের সুন্দর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে যাবেন”। কাল দুপুরে ড. ইউনূসকে রিসিভ করতে তিন বাহিনী প্রধানই এয়ারপোর্টে থাকবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের শপথ গ্রহণ আগামীকাল হতে পারে বলে জানিয়েছেন সেনা প্রধান ওয়াকার উজ জামান। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্য সংখ্যা নিয়ে করা এক প্রশ্নে মি. জামান বলেন, “আমার ধারণা আপাতত ১৫ জন হতে পারে। তারপরও দুই-একজন করতে পারে। মোটামুটি একটা দাঁড়িয়েই যাচ্ছে। যেহেতু ফরমালি প্রকাশ করা হয়নি তাই এখন কথা বলতে চাচ্ছি না”।
দেশে এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “পুলিশ এখন ডিউটিতে নেই। একটা বড় ফোর্সের ভয়েড সৃষ্টি হয়েছে। এটা সেনাবাহিনী দিয়ে পূরণ করা সম্ভব না”। খুব শীঘ্রই পুলিশ পুনর্গঠিত হবে আশা প্রকাশ করে মি. জামান বলেন, “পুলিশ কাজে নেমে যাবে যখন তখন ভয়েডটা পূরণ করতে পারবো। পুলিশ বিশাল একটা ফোর্স। এই ফোর্স যদি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় এই ভয়েড হয় এটা সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী কারো পক্ষে পূরণ করা সম্ভব না”।
“আমি নিশ্চিত পুলিশ খুব শিঘ্রই পুনর্গঠিত হবে। এ সমস্ত ভ্যানডালিজম প্রতিহত করতে সমর্থ হবে। এ সমস্ত কাজে যারা জড়িয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা আমরা করবো”।
ড. ইউনূসের ছয় মাসের সাজা বাতিল
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায় বাতিল করেছে শ্রম আপিলেট ট্রাইব্যুনাল। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদন গ্রহণ করে অধ্যাপক ইউনূসসহ চারজনকেই খালাস করে রায় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। রাজধানীর বিজয় নগরে অবস্থিত শ্রম আপিলেট ট্রাইব্যুনালে এ শুনানি দুপুর তিনটার পরে শুরু হয়। দেড় ঘন্টা শুনানির পর এ রায় দেয়া হয়।
ড. ইউনূসের আইনজীবী খাজা তানভীর আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ” আপিল গ্রহণ করে চারজনকেই খালাস করে রায় দিয়েছে শ্রম আপিলেট ট্রাইব্যুনাল”। গত পহেলা জানুয়ারি ড. ইউনূসসহ চারজনকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয় ঢাকার একটি শ্রম আদালত। সেই সঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে।
ওইদিন রায়ের পরে আদালতের বাইরে এক প্রতিক্রিয়ায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ”যে দোষ আমরা করি নাই, সেই দোষের ওপরে শাস্তি পেলাম। এটা আমাদের কপালে ছিল, জাতির কপালে ছিল, আমরা সেটা বহন করলাম।”
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের নয়ই সেপ্টেম্বর মামলাটি করেছিল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। এ মামলার অভিযোগের মধ্যে ছিলঅনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ না দেয়া এবং ১০১ জন শ্রমিকের চাকরি স্থায়ী না করা। এছাড়া গণছুটি না দেয়া, শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিল এবং অংশগ্রহণ তহবিল গঠন না করাও অন্যতম অভিযোগ এই মামলার। -বিবিসি বাংলা