সাঈদ চৌধুরী
বিশ্বের বৃহত্তম কন্টেইনার মালবাহী সংস্থাগুলি অস্থায়ীভাবে লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে তাদের জাহাজ পাঠানো স্থগিত করেছে। ফলে দূরপ্রাচ্য থেকে ইসরায়েলি আমদানি ও রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের বর্বর হামলার বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামী হামাসের প্রতি সমর্থনের অংশ হিসেবে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথি বাহিনী লোহিত সাগরে জাহাজে আক্রমন বাড়িয়েছে। হুথির প্রতিরোধ বেড়ে যাওয়ায় ইসরাইল অভিমুখে জাহাজ চলাচল বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
পূর্ব-পশ্চিম বাণিজ্য রুটকে লক্ষ্য করে হুথির আক্রমণগুলি চালিত হচ্ছে। বিশেষ করে সুয়েজ খাল অঞ্চল। তেলবাহী জাহাজ সমূহ সময় ও ব্যয় বাঁচাতে সুয়েজ খাল ব্যবহার করতে হয়।
ভূমধ্যসাগরীয় শিপিং কোম্পানি এবং সিএমএ সিজিএমকে লোহিত সাগরের সামুদ্রিক করিডোর এবং মিশরের সুয়েজ খাল দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করতে বাধ্য করেছে হুথিরা। এটি ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
ডেনিশ শিপিং জায়ান্ট মারস্ক এবং জার্মান শিপিং কোম্পানি হ্যাপাগ-লয়েড লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে তাদের জাহাজ পাঠানো স্থগিত ঘোষণা করেছে।
হুথিরা (আনসার আল্লাহ নামে পরিচিত) লোহিত সাগরে ইস্রায়েল-সম্পর্কিত বা অধিভুক্ত জাহাজগুলিতে ক্রমবর্ধমান ভাবে ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। ফলে বিভিন্ন সংস্থা লোহিত সাগর দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে (ইংরেজি বর্ণানুক্রমিক ক্রমে):
সিএমএ সিজিএম : ফ্রেঞ্চ শিপিং গ্রুপ সিএমএ সিজিএম (CMA CGM – CMACG.UL) ১৬ ডিসেম্বর বলেছে, তাদের একটি কন্টেইনার জাহাজ (MSC Palatium III) এক দিন আগে আক্রান্ত হবার পরে লোহিত সাগর দিয়ে সমস্ত কন্টেইনার চালান থামিয়ে দিচ্ছে।
হ্যাপাগ-লয়েড: জার্মান কনটেইনার শিপিং লাইন হ্যাপাগ লয়েড ((HLAG.DE) ১৫ ডিসেম্বর তাদের একটি জাহাজে হামলার খবর জানার কয়েক ঘন্টা পরে বলেছে, লোহিত সাগর হয়ে আর নৌযান চলাচল হবে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখছে। ইয়েমেনের উপকূলের কাছাকাছি যাত্রা করার সময় একটি ড্রোন তাদের জাহাজ আল জাসরাহকে আঘাত করেছিল বলে মনে করা হয়।
মারস্ক: ডেনমার্কের মারস্ক (A.P. Moller-Maersk) ১৫ ডিসেম্বর বলেছে, ওমানের সালালাহ থেকে যাওয়ার সময় তাদের জাহাজটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আক্রান্ত হয়েছে। ফলে লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে সমস্ত কন্টেইনার চালান পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিরতি দেবে৷
ওওসিএল: হংকং-ভিত্তিক ওরিয়েন্টাল ওভারসিজ (ইন্টারন্যাশনাল) লিমিটেডের মালিকানাধীন শিপিং কোম্পানি ১৬ ডিসেম্বর জানিয়েছে, ওরিয়েন্ট ওভারসিজ কন্টেইনার লাইন (OOCL) পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ইস্রায়েলে কার্গো সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ইসরাইল থেকে এবং ইসরাইল অভিমুখে কোনো জাহাজ পরিচালনা করবে না ওওসিএল।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় প্রায় ১৯ হাজার মানুষ হত্যার প্রতিবাদে গত কয়েক সপ্তাহে ইসরাইল অভিমুখী বেশ কয়েকটি জাহাজে হামলা চালিয়েছে ইয়েমেন বাহিনী। তারা বলেছে, যতদিন গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধ চলবে ততদিন এরকম হামলাও অব্যাহত থাকবে।
ইয়েমেনের হুথিদের হামলার ভয়ে এরইমধ্যে ইসরাইলের মালিকানাধীন জাহাজগুলো লোহিত সাগর ও বাব আল-মান্দাব প্রণালি এড়িয়ে বিকল্প ব্যয়বহুল রুট বেছে নিয়েছে।
ইসরাইলি নৌবাহিনীর সাবেক কমান্ডার এলিজার মারুম সম্প্রতি বলেছেন, ইসরাইলের শতকরা ৯৫ ভাগ আমদানি রফতানি লোহিত সাগরের মাধ্যমে হয়। কাজেই ইয়েমেন কার্যত আমাদের বিরুদ্ধে নৌ অবরোধ আরোপ করেছে।
লোহিত সাগর এড়িয়ে চলতে হলে ইসরাইল অভিমুখী যেকোনো জাহাজকে পুরো আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে ১৩ হাজার কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিয়ে ইসরাইলে পৌঁছাতে হবে। সূত্র : রয়টার, টাইম অব ইসরায়েল ও পার্সটুডে