অনুবাদ মাসুম খলিলী:
এক. মনে রাখবেন জীবনে এমন কিছু মানুষ থাকবে যারা কখনই স্বীকার করতে পারবে না যে তারা ভুল করেছে। এমন মানুষ আছে। তারা সবসময় আপনাকে অনুভব করার চেষ্টা করাবে যে আপনি দোষী। এই ধরনের লোকদের থেকে সাবধান থাকুন। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন। তাদের জন্য দোয়া করবেন। একমাত্র সর্বশক্তিমান তাদের সাহায্য করতে পারেন।
দুই. সর্বশক্তিমান আপনি দেখতে কেমন, আপনি কি করেন, আপনি কি জানেন তা নিয়ে ভাবেন না। তিনি আপনার হৃদয়ের দিকে তাকান। আপনার অতীত নিয়েও আপনাকে তিনি বিবেচনা করেন না। এটি বিশ্ব আপনাকে যেভাবে দেখে তার সম্পূর্ণ বিপরীত। লোকেরা আপনার বাইরের সব দিক এবং আরও অনেক কিছুর দিকে নজর দেবে । আপনার অগ্রাধিকার সঠিক স্থানে রাখুন। কে বেশি গুরুত্ব পাবার দাবিদার এটা আপনার ঠিক করার বিষয়!
পূনশ্চঃ
এক. শিশু, নারী, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, হাসপাতাল, স্কুল, অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক, শিক্ষক, আবাসিক কমপ্লেক্স এবং আরও অনেক কিছুতে হামলা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। কিছুই কখনও এই কাজকে সমর্থন করতে পারে না। হারিয়ে গেছে এখন মানবতা!
দুই. সর্বশক্তিমান আপনার অন্তরের দিকে তাকান। আপনার সংযোগ, কৃতিত্ব, প্রশংসাসমূহ ইত্যাদি কিছু তেমন বিবেচ্য নয়। আপনি দয়া, ভালবাসা ও মমত্ববোধের বাইরে কাজ করছেন কিনা অথবা সব কিছু আপনার আত্মকেন্দ্রীক কিনা তিনি সেটি দেখছেন। সমাজ বেশ স্বার্থপর হয়ে উঠেছে। আপনার হৃদয় যদি সঠিক জায়গায় থাকে তবে আপনি সঠিক পথে আছেন!
তিন. লোকেরা যখন আপনার সম্পর্কে খারাপ কথা বলে তখন মন খারাপ করবেন না। নেতিবাচক আবেগ দিয়ে আপনার শক্তি নষ্ট করবেন না। তারা কেবল আপনাকে নিষ্কাশন করবে। মনে রাখবেন, যারা জীবনে প্রভাব ফেলছে না তাদের নিয়ে লোকেরা মাথা ঘামাবে না। আপনি যা করতে চান তা চালিয়ে যান এবং অন্যরা যা করবে তা তাদের বলতে দিন।
চার. জীবন অতটা সহজ নয়। আপনি পার্কে হাঁটেন তাতে কল্যাণের আশা ও বিশ্বাস করেন বলেই। আপনাকে অবশ্যই অপ্রত্যাশিত বাঁক এবং উঠানামা আশা করতে হবে। এসব আপনার যাত্রার অংশ। আপনি কীভাবে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠবেন সেটি আপনাকে বিজয়ী বা পরাজিত করবে।
পাঁচ. আপনি যা ভাবেন তা নিয়ে সাবধান থাকুন। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা, অনুমান আর ‘যদি’ ধরনের বিষয় ইত্যাদি থেকে মুক্তি নিন। ‘যদি’ ধরনের কিছু কোনও উদ্দেশ্য পূরণ না করে। আপনি ‘যদি’কে বার বার সামনে নিয়ে আসতে থাকেন তবে আপনি হেরে যাবার মধ্য দিয়ে নিজেকে শেষ করবেন । শয়তান এটাই চায়। আপনার মনের বেশিরভাগ কামনা বা দৃশ্যপট বাস্তবে ঘটবে না! সুক্ষাতিসুক্ষ বিষয়গুলি সরিয়ে দিন এবং প্রত্যাশার আলো দেখা শুরু করুন!
দ্রষ্টব্যঃ
আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, আমার পিতা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ একদা আমরা রসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি আমাদের সামনে আবির্ভূত হলো। তার পরনের কাপড়-চোপড় ছিল ধবধবে সাদা এবং মাথার চুলগুলো ছিল মিশমিশে কালো। সফর করে আসার কোন চিহ্নও তাঁর মধ্যে দেখা যায়নি। আমাদের কেউই তাঁকে চিনিও না। অবশেষে তিনি নবী (সা)-এর সামনে বসলেন। তিনি তাঁর হাঁটুদ্বয় নবী (সা)-এর হাঁটুদ্বয়ের সাথে মিলিয়ে দিলেন এবং দুই হাতের তালু তাঁর (অথবা নিজের) উরুর উপর রাখলেন এবং বললেন, হে মুহাম্মাদ (সা) ! আমাকে ইসলাম সম্বন্ধে বলুন। রসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ ইসলাম হচ্ছে এই- তুমি সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ (মা‘বুদ) নেই, এবং মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহর রসূল, সালাত কায়িম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমাযানের সওম পালন করবে এবং যদি পথ অতিক্রম করার সামর্থ্য হয় তখন বাইতুল্লাহর হজ্জ করবে। তিনি বললেন, আপনি সত্যই বলেছেন। বর্ণনাকারী [‘উমর (রাঃ) ] বলেন, আমরা তাঁর কথা শুনে আশ্চর্যান্বিত হলাম। কেননা তিনি (অজ্ঞের ন্যায়) প্রশ্ন করছেন আর (বিজ্ঞের ন্যায়) সমর্থন করছেন। এরপর তিনি বললেন, আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন। রসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ ঈমান এই যে, তুমি আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাকুল, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর প্রেরিত নবীগণ ও শেষ দিনের উপর ঈমান রাখবে এবং তুমি তাকদীর ও এর ভালো ও মন্দের প্রতিও ঈমান রাখবে। তিনি বললেন, আপনি সত্যই বলেছেন। এবার তিনি বললেন, আমাকে ‘ইহসান’ সম্পর্কে বলুন। রসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ ‘ইহসান’ এই যে, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ‘ইবাদাত করবে যেন তাঁকে দেখছো, যদি তাকে না দেখো তাহলে তিনি তোমাকে দেখছেন বলে অনুভব করবে। এবার তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমাকে কিয়ামাত সম্বন্ধে বলুন! রসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি বেশি কিছু জানে না। অতঃপর তিনি বললেন, তাহলে আমাকে এর কিছু নিদর্শন বলুন। তিনি বললেন, দাসী তাঁর মনিবকে প্রসব করবে এবং (এককালের) নগ্নপদ, বস্ত্রহীন, দরিদ্র, বকরীর রাখালদের বড় দালান-কোঠা নির্মাণের প্রতিযোগিতায় গর্ব-অহংকারে মত্ত দেখতে পাবে। বর্ণনাকারী [‘উমার (রাঃ) ] বলেন, এরপর লোকটি চলে গেলেন। আমি বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। তারপর রসূলুল্লাহ (সা) আমাকে বললেন, হে ‘উমার! তুমি জান, এ প্রশ্নকারী কে? আমি আরয করলাম, আল্লাহ ও তাঁর রসূলই অধিক জ্ঞাত আছেন। রসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তিনি জিবরীল। তোমাদের কাছে তিনি তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন। (সহিহ মুসলিম: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ১ম খণ্ড, ১; বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ১ম খণ্ড,১)
* লেখক: মুফতি মনক (ডক্টর ইসমাইল ইবনে মুসা মেনক) ইসলামি স্কলার ও জিম্বাবুয়ের প্রধান মুফতি * অনুবাদ: মাসুম খলিলী সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট