বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ইউকে আয়োজিত স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তারা বলেছেন, দৈনিক ইত্তেফাক ও নিউ নেশন পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন ছিলেন বস্তুনিষ্ঠ ও আদর্শবাদী মানুষ।
গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারী ২০২৪) ইস্ট লন্ডনের উডহাম কমিউনিটি হলে জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি সাংবাদিক ও সমাজসেবী কেএম আবুতাহের চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক খান জামাল নুরুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট লেখক ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্ধ অংশ গ্রহন করেন।
অনুষ্ঠানে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেনের জীবন ও কর্ম নিয়ে মুলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সময় সম্পাদক কবি ও কথাসাহিত্যিক সাঈদ চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও সাবেক কাউন্সিলার ব্যারিষ্টার নাজির আহমদ ও বিশেষ আলোচক ছিলেন অধ্যাপক মোহাম্মদ মনির।
কমিউনিটি নেতাদের মধ্যে আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন সমাজসেবী নুরুল আমিন, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মোস্তফা, ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিবিসিসিআই) ভাইস প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক আব্দুল হাই, এম এ মুকিত, আশরাফ গাজী, শফিকুর রহমান খান, হাজী ফারুক মিয়া প্রমুখ।
লেখক-সাংবাদিকদের মধ্যে আলোচনা করেন ড. এম এ আজিজ, জয়নাল আবেদীন, ইয়াওর উদ্দিন, বদরুজ্জামান বাবুল, আফসর উদ্দিন, আজিজুল আম্বিয়া, খালেদ মাসুদ রনি প্রমুখ ।
দোয়া পরিচালনা করেন বিশিষ্ট টিভি প্রেজেন্টার মাওলানা আব্দুল কুদ্দুছ জকিগন্জী ।
মুলপ্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন বস্তুনিষ্ঠ ও আদর্শবাদী মানুষ হিসেবে গণতন্ত্র ও মুক্তবুদ্ধি চর্চা এবং আত্মমর্যাদা ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ সাধনে নিরলস ভাবে কাজ করে গেছেন। দেশপ্রেম ও মানবিকতার আদর্শকে ধারণ করতে হলে এমন মানুষকে স্মরণ করতে হবে বার বার।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি ও প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে দেশের সাংবাদিকতার মান উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন। ওয়ান-ইলেভেনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষা এবং নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণে রেখেছেন বলিষ্ঠ ভূমিকা।
১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে পিরোজপুর জেলায় পিতৃপুরুষের আবাসভূমি ভান্ডারিয়া-কাঠালিয়া নির্বাচনী এলাকা হতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদে নিবর্তনমূলক যে কোন আইনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। ১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল পদ্ধতির শাসন প্রবর্তনের প্রতিবাদে তিনি এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন।
বাংলাদেশের সাংবাদিকতার প্রবাদতুল্য ব্যক্তিত্ব ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা নির্ভীক সাংবাদিক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। ১৯৬৯ সালে বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর ইত্তেফাক সম্পাদনার গুরুদায়িত্ব তাঁকে পালন করতে হয়। ১৯৭৩ সালে আইন পেশায় অধিক মনোযোগী হবার ফলে ইত্তেফাকের সম্পাদক পদ ছেড়ে সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি হন।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের সহজাত আভিজাত্য যেমন ছিল, তেমনি দেশপ্রেম তথা মাটি ও মানুষের উন্নয়নচিন্তা ছিল স্বভাবজাত। কোন রকম স্বার্থ বা মতলব সেখানে স্থান পায়নি। অকুতোভয় সাহসের জন্য তিনি জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন কিন্তু রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তার কন্ঠ অবদমিত হয়নি কখনো।
কেউ কেউ তাকে অহংকারি ভাবেন। আসলে তিনি অহংকার ও আত্মমর্যাদার ফারাক বুঝতেন। তিনি জানতেন আত্মসম্মান বোধ ছাড়া মানুষ সৎ ও সাহসী হতে পারেনা। আর অসততা মানুষকে ব্যক্তিত্বহীন করে তোলে।
নীতির প্রশ্নে আপসহীন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন মনে করতেন, আত্মসম্মান মানসিক শক্তি বাড়ায়। ইতিবাচক উপায়ে প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে সাহায্য করে। ফলে অশোভনীয় কোন কাজ তার মাধ্যমে সংঘটিত হয়নি। কপটতা তার ধার ঘেঁষেনি কখনো।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন অত্যন্ত কঠিন এবং বৈরী পরিবেশেও সকল প্রকার লোভ ও ভীতি উপেক্ষা করে সত্য উচ্চারণ করেছেন দৃঢ়তার সাথে। তাঁর প্রজ্বলিত চোখ ছিল দেশপ্রেমে উদ্দীপিত। যারা আজীবন সাহসের সাথে আমাদের আত্মপরিচয় জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন, তিনি ছিলেন তাদের মধ্যমণি।
সভায় বক্তারা বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন ইউকের মাধ্যমে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন স্মরণে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের প্রস্তাব করেন।
অনুষ্ঠানে ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন ও সাংবাদিক জয়নাল আবেদীনের মাতার মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা হয়। বক্তারা মরহুমদের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং তাঁদের জান্নাতুল ফিরদাউসে আসীন করার জন্য মহান আল্লাহর কাছে পার্থনা করেন।