গ্যারি ওডোনোহিউ বিবিসি উত্তর আমেরিকার প্রধান সংবাদদাতা, ওয়াশিংটন থেকে:
বিবিসির সাথে একান্ত ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ব্যাপারে হতাশ, তবে তার সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করেননি।
মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি রাশিয়ান নেতাকে বিশ্বাস করেন কিনা এবং তিনি উত্তর দিয়েছেন, “আমি প্রায় কাউকেই বিশ্বাস করি না।”
এই মন্তব্য করার ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে তিনি ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেন এবং আগামী ৫০ দিনের মাঝে যুদ্ধবিরতির চুক্তি না হলে তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দেন।
হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিস থেকে বিবিসিকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে তিনি নেটোর প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন। যদিও একসময় তিনি নেটোকে “অচল” বলে মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি নেটোর যৌথ প্রতিরক্ষা নীতিকে সমর্থন করেন বলে জানিয়েছেন।
পেনসিলভানিয়ার বাটলারে নির্বাচনি প্রচারণা চলাকালে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছিলো, সেই ঘটনার এক বছর পূর্তি বিষয়ক একটি সম্ভাব্য সাক্ষাৎকার নিয়ে আলোচনার পর তিনি বিবিসিকে ফোনকল করেন।
মি. ট্রাম্পের সাথে বিবিসি’র কথোপকথন টানা ২০ মিনিট ধরে চলে। হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়ার পর তার মাঝে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে যতটা সম্ভব কম ভাবতে চান।
তার ভাষ্যে, “এটা (হত্যাচেষ্টা) আমাকে বদলে দিয়েছে কি না, এ নিয়ে আমি ভাবতে পছন্দ করি না।” কারণ, এটি নিয়ে বেশি ভাবলে “জীবনই বদলে যেতে পারে” বলে মনে করছেন তিনি।
এদিকে, নেটো মহাসচিব মার্ক রুটে-এর সাথে হোয়াইট হাউজে সাক্ষাৎ শেষে তিনি বিবিসিকে সাক্ষাৎকারটি দেন এবং এই সাক্ষাৎকারের একটা লম্বা সময় ধরেই তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের প্রতি তার হতাশার কথা বলেন।
মি. ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানার বিষয়ে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে–– অতীতে চার বার এরকমটা ভেবেছেন তিনি। এসময় বিবিসি জানতে চায়, তাহলে কি তিনি মি. পুতিনের বিষয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছেন? উত্তরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমি তার ওপর হতাশ, কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি।”
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জোর দিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি কীভাবে পুতিনকে ‘রক্তপাত বন্ধ’ করতে বলবেন? তখন তিনি বিবিসি সংবাদদাতাকে বলেন, “আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি, গ্যারি।”
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে উদ্দেশ করে আরও বলেন, “তার সাথে আমার বেশ ফলপ্রসূ একটি আলোচনা হবে। আমি বলবো- ‘ভালো, আমরা চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি বলে মনে হচ্ছে’ এবং এর ঠিক পরপরই তিনি কিয়েভে একটি বিল্ডিং ধ্বংস করে দেবেন।”
রাশিয়া সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা তীব্র করেছে, যার ফলে রেকর্ড সংখ্যক বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে তারা প্রতিবেশী এই দেশটিতে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করেছিল।
পুতিন জোর দিয়ে বলেছেন যে তিনিও শান্তি চান। কিন্তু তিনি এটাও বলেছেন যে যুদ্ধের ‘মূল কারণগুলো’ প্রথমে সমাধান করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। পুতিন যুক্তি দেন যে এই যুদ্ধ কিয়েভ, নেটো এবং ‘সম্মিলিত পশ্চিমা’ শক্তির তরফ থেকে রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য বাহ্যিক হুমকির ফলাফল।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা পরে নেটোর দিকে এগিয়ে যায়, যেটিকে তিনি এর আগে “অচল” বলে সমালোচনা করেছেন।
তিনি কি এখনো মনে করেন তার ওই মতামত সত্য কি না–– জানতে চাইলে তিনি বলেন, “না। আমার মনে হয় নেটো এখন এর বিপরীত হয়ে উঠছে”, কারণ এই জোট “তাদের নিজস্ব বিল পরিশোধ করছে”। তিনি বলেন যে তিনি এখনো সম্মিলিত প্রতিরক্ষায় বিশ্বাস করেন, যার ফলে ছোট দেশগুলো বৃহত্তর দেশগুলোর বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।
ট্রাম্প বলেন, জার্মানি, ফ্রান্স ও স্পেনসহ বিভিন্ন দেশের নেতারা তাকে এবং তার নেওয়া সিদ্ধান্তকে সম্মান করতে শুরু করেছেন। কারণ বিশ্ব নেতারা বিশ্বাস করেন যে দুইবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে “বিশেষ দক্ষতা” রয়েছে।
বিশ্ব নেতারা মাঝে মাঝে “তাদের তোষামোদে স্পষ্ট” ছিলেন কিনা জানতে চাইলে ট্রাম্প উত্তর দেন যে তিনি মনে করেন তারা “শুধু ভালো ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন”।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বিশ্বে যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল এবং তিনি উত্তরে বলেন যে তিনি মনে করেন এটি একটি “মহান জায়গা, আপনি জানেন যে আমার সেখানে সম্পত্তি আছে”। ব্রেক্সিটের বিষয়ে, তিনি বলেছেন, এটি “ঢালু অবস্থানে ছিল, কিন্তু আমি মনে করি এটি সোজা হয়ে যাচ্ছে”।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীকে সত্যিই অনেক পছন্দ করি, যদিও তিনি একজন উদারপন্থি”, এবং যুক্তরাজ্য-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন যে যুক্তরাজ্যের সাথে তার “বিশেষ বন্ধন” রয়েছে এবং সেই কারণেই তিনি দেশটির সাথে একটি চুক্তি করেছেন – “বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, আপনার প্রতিযোগীদের ক্ষেত্রে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে আমি কোনো চুক্তি করিনি”।
এই বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যে দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য কীভাবে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সে সম্পর্কে তিনি কথা বলেছেন। সফরকালে তিনি কী অর্জন করতে চান সে সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, “ভালো সময় কাটাতে” চান এবং রাজা চার্লসকে সম্মান দেখাতে চান, কারণ “তিনি দারুণ একজন ভদ্রলোক”।
তিনি বলেন, তিনি চান না যে আগামী সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে অনির্ধারিত কোনো অধিবেশন ডাকা হোক যেখানে তিনি বক্তৃতা দিতে পারেন, বরং তিনি চান পার্লামেন্ট সদস্যদের সময় উপভোগ করা উচিত- “আমি মনে করি তাদের যেতে দিন এবং ভালো সময় কাটান”।
ট্রাম্প আরও বলেন যে কানাডার পার্লামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজা চার্লসের (যেখানে রাজা এবং কানাডার রাষ্ট্রপ্রধান) বক্তৃতায় তিনি উদ্বিগ্ন নন। যুক্তরাষ্ট্র কানাডাকে তার সঙ্গে যুক্ত করতে পারে– ট্রাম্পের এমন মন্তেব্যর পর রাজা চার্লস দেশটির সার্বভৌমত্বের ওপর জোর দিয়েছিলেন। “তারা কানাডার সাথে জড়িত, তাই তিনি (চার্লস) কী করবেন আপনি জানেন। তার আর কোনো বিকল্প নেই,” বলেন ট্রাম্প। “আমি ভেবেছিলাম তিনি খুব ভালো, খুব শ্রদ্ধাশীল।”
তিনি বলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র “এখন কানাডার সাথে আলোচনা করছে” এবং এটি “খুব ভালোভাবে কাজ করবে”।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার উত্তরাধিকারকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করবেন বলে মনে করেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমেরিকাকে বাঁচানো”। “আমি মনে করি আমেরিকা এখন একটি মহান দেশ এবং এক বছর আগে এটি একটি মৃত দেশ ছিল।”