প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সাক্ষাৎ ছাড়াই তুরস্ক সফর শেষ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। গাজা যুদ্ধের মধ্যে ওয়াশিংটনের সবচেয়ে কৌশলগত কিন্তু সবচেয়ে কঠিন মিত্রদের ক্ষোভ প্রশমিত করার মিশন নিয়ে সোমবার তুরস্ক সফর করেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট দেশের উত্তর-পূর্বে একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল পরিদর্শন করতে চলে যাওয়ায় তার সাথে সাক্ষাৎ হয়নি। আপাতদৃষ্টিতে ব্লিঙ্কেনের কাছে এটি একটি অপমানজনক ঘটনা।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সাথে বৈঠক করেন মার্কিন এই শীর্ষ কূটনীতিক। ইসরায়েলি বাহিনী হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ায় গাজায় বেসামরিক দুর্ভোগ কমানোর জন্য আঞ্চলিক ঐকমত্য তৈরির প্রচেষ্টায় সীমিত সাফল্যের পর তিনি এ সফর করেন। বৈঠকের বিষয়ে অবশ্য কোনো যৌথ বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
ইউরো নিউজে কূটনৈতিক সূত্র অনুসারে বলা হয়েছে, তুরস্ক এবং বিস্তীর্ণ আরব অঞ্চলে ইসরায়েল এবং পশ্চিমের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের মধ্যে তাদের বৈঠক হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৭ অক্টোবর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো তার তুর্কি প্রতিপক্ষ হাকান ফিদানের সঙ্গে দেখা করেন।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনকে গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করে জোর দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলকে বেসামরিক লোকদের লক্ষ্যবস্তু করা এবং লোকজনকে বাস্তুচ্যুত করা থেকে বিরত রাখা প্রয়োজন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মানবিক যুদ্ধ বিরতির কথাটি তুলেছেন। তবে এটি যথেষ্ট নয় বলে উল্লেখ করেছে তুরস্ক।
বৈঠকে গাজার যুদ্ধ এবং হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে বন্দী বিনিময়সহ বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তুরস্ক নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে। তারা বলেছে, যুদ্ধবিরতির জন্য একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা থাকা উচিত।
তুর্কি কর্মকর্তাদের হামাসের ওপর আরো চাপ সৃষ্টি করতে এবং বন্দীদের মুক্তি দিতে আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিনিধি। তবে এ বিষয়ে তুরস্কের অবস্থান ছিল খুবই স্পষ্ট। তুরস্ক বলেছে, বন্দীদের মুক্তি পারস্পরিক হতে হবে। ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দিলে হামাসও ইসরাইলি বন্দীদের মুক্তি দেবে।
তুরস্কের আগে ইরাক সফর করেন ব্লিঙ্কেন। তারও আগে জর্ডানের রাজধানী আম্মানে লেবানন, কাতার, মিসর, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতাদের সাথেও দেখা করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে ইসরাইল সফর করেন তিনি।
এদিকে ব্লিঙ্কেনের আগমনের কয়েক ঘন্টা আগে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বে মার্কিন বাহিনীর একটি বিমানঘাঁটি এলাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তুরস্কের প্রতিবাদী জনতা। স্থানীয় পুলিশ টিয়ারগ্যাস এবং জলকামান ব্যবহার করে শত শত বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করতে হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইসরায়েল অব্যাহত বোমা হামলার পাশাপাশি গাজায় পানি, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের হামলায় হাজার হাজার বেসামরিক লোক নিহত ও আহত হয়েছেন।
এদিকে মিশরের সাথে রাফাহ সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে এই অঞ্চলে যে সীমিত ত্রাণ পৌঁছেছে তাতে জাতিসংঘ বলেছে, যা প্রয়োজন তার জন্য এটি দুঃখজনকভাবে অপর্যাপ্ত।
জর্ডান থেকে গাজার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা সহায়তা প্যাকেজ পাঠিয়েছেন বাদশাহ আবদুল্লাহ দ্বিতীয়। জর্ডানের সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, জর্ডান এয়ার ফোর্সের একটি বিমান থেকে প্যারাসুটের মাধ্যমে চিকিৎসা সরবরাহ করা হয়েছে।
অবরুদ্ধ ছিটমহলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গাজায় ইসরায়েলের লাগামহীন হামলায় প্রায় ১০,০০০ মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের অর্ধেকই শিশু।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনে বেসামরিক মৃত্যুতে “কুমিরের অশ্রু” ফেলার জন্য পশ্চিমাদের ভণ্ডামিকে বিস্ফোরিত করেছেন, যখন ইসরায়েল গাজাকে ধ্বংস করার সময় তারা নির্বিকারভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে। সূত্র : ইউরো নিউজ,আল-জাজিরা ও এপি