সিরিয়ায় বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করেছে, প্রেসিডেন্ট আসাদের ‘শহর ত্যাগ’

মধ্যপ্রাচ্য সাম্প্রতিক
শেয়ার করুন

আজ (রবিবার) সকালের দিকে সিরিয়ার সরকারের পতন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বিদ্রোহী বাহিনীর দ্রুত অগ্রসরমান অভিযানের মুখে আসাদ পরিবারের ৫০ বছরের শাসনের অবসান হয়েছে। দুজন উচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিমান যোগে অজ্ঞাত গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।

সিরিয়ায় বিদ্রোহীরা বলেছে, তারা দেশের রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করেছে। তারা শহরে সামরিক বাহিনীর কোন প্রতিরোধ ব্যবস্থার মুখোমুখি হচ্ছে না। সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ গাজি জালালি বলেন, সরকার বিরোধীদের দিকে “সহযোগিতার হাত” বাড়িয়ে দিতে এবং প্রশাসনের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত। “আমি আমার বাসায় আছি, আমি কোথাও চলে যায়নি, কারণ আমি এই দেশেরই মানুষ,” জালালি এক ভিডিও বিবৃতিতে বলেন। জালালি বলেন তিনি সকালে কাজ করতে তাঁর দফতরে যাবেন এবং তিনি সিরিয়ানদের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট না করার আহ্বান জানান।

প্রেসিডেন্ট আসাদ কোথায় আছেন, সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলেন নি। তবে ব্রিটেন-ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস-এর প্রধান রামি আব্দুররহমান অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানান যে, আসাদ সকালেই বিমান যোগে দামেস্ক ছেড়ে চলে গেছেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায় যে আসাদ রাজধানী ছেড়ে চলে গেছেন। তারা কাতার-ভিত্তিক আল জাজিরা নেটওয়ার্ক-এর বরাত দিয়ে খবরটি দেয়, কিন্তু বিস্তারিত কিছু বলেনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হাজার হাজার মানুষ গাড়ি চড়ে এবং পায়ে হেঁটে দামেস্কের প্রধান স্কয়ারে সমবেত হয়ে “মুক্তি” বলে স্লোগান দিচ্ছেন। সিরিয়ার সরকারের তরফ থেকে তাৎক্ষণিক কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসেনি। সরকার-সমর্থক রেডিও স্টেশন শাম এফ এম জানায়, দামেস্ক বিমান বন্দর থেকে সবাইকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং সকল ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।

বিদ্রোহীরা বলেছে তারা রাজধানীর উত্তরে কুখ্যাত সেয়দনায়া কারাগারে প্রবেশ করে সেখান থেকে “আমাদের বন্দীদের স্বাধীন করেছি।” তারা যোগ করে “আমরা সেয়দনায়া কারাগারে অন্যায়ের যুগের অবসান ঘোষণা করছি এবং সিরিয়ার জনগণের সাথে আমাদের বন্দীদের মুক্তির খবর নিয়ে আনন্দ করছি।” দামেস্কের উপকণ্ঠে সামরিক কারাগার সেয়দনায়াতে সিরিয়ার সরকার হাজার হাজার লোককে বন্দী রেখেছিল।

সিরিয়ার বিদ্রোহীরা রবিবার ভোরের দিকে জানায় তারা মাত্র একদিন লড়াই-এর পর গুরুত্বপূর্ণ শহর হোমস-এর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এর ফলে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ২৪ বছর-দীর্ঘ শাসন পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো থেকে সরকারী বাহিনী প্রত্যাহার করার ফলে বিদ্রোহীরা উৎসাহ পেয়েছে এবং তারা আসাদের ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল রাজধানীর দিকে অগ্রসর হওয়ার ঘোষণা দেয়।

রাজধানীর দক্ষিণ-পশ্চিমের মফস্বল এলাকাতে সরকারী নিয়ন্ত্রণ ভেঙ্গে পড়ার সুযোগে, স্থানীয় যুবক এবং প্রাক্তন বিদ্রোহীরা আসাদ পরিবারের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে। সরকারী বাহিনী শনিবার হোমস ছেড়ে চলে যাওয়ার খবরে সিরিয়াজুড়ে বিদ্রোহীদের চমক লাগানো অভিযানে আরও গতি আসে এবং তারা রাজধানীর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়।

হোমস এর পতন ছিল আসাদের জন্য মারাত্মক বিপর্যয়। রাজধানী দামেস্ক এবং সিরিয়ার উপকূলীয় প্রদেশ লাতাকিয়া এবং তারতুস-এর সংযোগ স্থলে হোমস-এর অবস্থান। এই দুটি প্রদেশ সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের সমর্থনের কেন্দ্র এবং সেখানে রাশিয়ার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ একটি নৌঘাঁটি অবস্থিত। রয়টার্স, ভিওএ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *