ছবিতে যা দেখতে পাচ্ছেন তা খুব সম্ভব, আমার জানা মতে, পৃথিবীতে একমাত্র কবর যেটা মাটির নীচে না, মাটির উপরে! স্পেইনে মুসলিমদের ইতিহাস ঘাঁটতে গিয়ে আমার কাছে সবচে’ শকিং, সবচে’ সারপ্রাইজিং লেগেছে স্পেইনে মুসলিমদের পতনের সাথে খ্রিষ্টোফার কলম্বাস এর আমেরিকা ‘আবিষ্কার’ এর ডাইরেক্ট লিঙ্ক!
সোজা করে বলি- যদি মুহাম্মাদ দ্য টুয়েলফথ্ (যাকে স্প্যানিশরা কিং বোয়াবদিল বলে) আত্নসমর্পন করার সিদ্ধান্ত না নিতো, আর মুসলিমরা যুদ্ধ কন্টিনিউ করতো, যদি আলহামরার পতন না হতো, এবং কলম্বাস এমেরিকা যাওয়ার জন্য যে পরিমাণ টাকা-পয়সার দরকার ছিলো, তা পেতো না, এবং আজকের যে এমেরিকা আপনারা দেখেন, সেই এমেরিকার অস্তিত্ব থাকতো না!
আমার কাছে, হিষ্ট্রির এই অংশটুকু অসম্ভব ফ্যাসিনেটিং লেগেছে। ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন, খ্রিষ্টোফার কলম্বাস এর কবর। মুসলিমদের মসজিদের ভিতরে। সেভিয়্যা গ্র্যান্ড মস্ক, যেটাকে ওরা ক্যাথেড্রাল বানিয়ে ফেলেছে, এর ভিতরে।
খ্রিষ্টোফার কলম্বাস বলে গিয়েছিলো তার কবর যেন মাটির নীচে দেয়া না হয় (গড্ নোওজ, হোয়াই!)। কলম্বাসের অরিজিনাল কবর এখানে ছিলো না, অনেক টুইস্ট এন্ড টার্নের পর, স্পেইনের হিস্পানিক খৃষ্টানরা কলম্বাসের লাশ ফেরত এনে এই গ্র্যান্ড মস্ক- থুক্কু ক্যাথেড্রালের ভিতর এভাবে মাটির উপরে কবর দেয়
ভাবতে পারেন, ক্যাথেড্রালের ভিতরে কেনো?! সে কি রিলিজিয়াস ফীগার ছিলো? এখানেই কথা- ইতিহাসের জানার শুরু হতে হবে আপনার ইতিহাসের যে বর্তমান রিডিং- যেখানে খৃষ্টানদেরকে সেক্যূলার হিসেবে রিপ্রেজেন্ট করা হয়- সেই রিডিং কে অস্বীকার করে।
খৃষ্টানদের চেয়ে রিলিজিয়াস এবং এক্সট্রীম কট্টর রিলিজিয়াস আর কোনো গ্রুপ ১ম শতাব্দীর পরে পৃথিবীতে ছিলো বলে আমার জানা নেই। ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যূলিউশান পর্যন্ত, রেঁনেসা পর্যন্ত, খৃষ্টানদের রাষ্ট্র থেকে শুরু করে পরিবার পর্যন্ত প্রত্যেকটা মানুষের জীবন ডাইরেক্টলি চার্চ কন্ট্রোল করতো।
রাজা ফার্দিনান্দ আর রানী ইসাবেলার যে মুসলিমদের এগেইন্সটে যুদ্ধ, এটা রাজত্বের যুদ্ধ ছিলো না, এটা ডাইরেক্ট পোপের অর্ডার ছিলো।
খ্রিষ্টোফার কলম্বাস এর কথায় ফেরত আসি। খ্রিষ্টোফার কলম্বাস অনেকদিন ধরেই চার্চকে বুঝাতে চেষ্টা করতেছিলো যে খৃষ্টোধর্মকে স্প্রেড করার জন্য, চার্চের রাজত্বের পরিধি বাড়ানোর জন্য সে নতুন জায়গায় যেতে চায়, তাকে সমুদ্র যাত্রার জন্য খরচ দিতে। কিন্তু চার্চের তখন সেই ধনসম্পদ ছিলো না।
যখন আলহামরার পতন হলো- ১৪৯২ সালের জানুয়ারী মাসে, মুহাম্মদ দ্য টুয়েলফথ্ সারেন্ডার করলো, সেই সারেন্ডারের অনুষ্ঠানে খোদ খ্রিষ্টোফার কলম্বাস উপস্থিত ছিলো, তারপর খৃষ্টান বাহিনী আলহামরায় যে পরিমাণ সম্পদ পেয়েছিলো, তখন ইসাবেলা আর ফার্দিনান্দ খ্রিষ্টোফার কলম্বাসকে ডেকে পাঠালো- বললো- কত লাগবে তোমার সমুদ্র যাত্রায়, নিয়ে যাও যা লাগে।
সেই বছরেই কয়েক মাসের মধ্যে খ্রিষ্টোফার কলম্বাস রওনা দিলো সমুদ্র পথে, এবং একই বছরেই অক্টোবর মাসে গিয়ে সে এমেরিকার মাটিতে নামলো আর ঘোষণা দিলো ‘দিস ইজ দ্য নিউ ওয়ার্ল্ড’!
এমেরিকার ইতিহাস আমরা সাধারণ মানুষরা তেমন জানিনা, তাই এটাও জানিনা যে এমেরিকার খৃষ্টানরা শুরুতে ডাইরেক্ট স্পেইনের চার্চের অধীনে ছিলো। এমেরিকার নিজেদের স্বাধীনতা যুদ্ধ করতে হয়েছে, অনেক সিভিল ওয়ার হয়েছে, চার্চের অধীন থেকে বের হয়ে আসতে।
যেহেতু খ্রিষ্টোফার কলম্বাস এমেরিকাকে এনে দিয়েছিলো স্পেইনে, খ্রিষ্টোফার কলম্বাসকে তাই স্পেইনে চার্চ ‘সেইন্ট’ ঘোষণা দিয়েছিলো; কারণ খ্রিষ্টোফার কলম্বাস এই যাত্রা, এই নতুন জায়গা আবিষ্কার সবই করেছিলো খৃষ্টধর্মের প্রসারের জন্য, চার্চের রাজত্ব বাড়ানোর জন্য।
গ্রানাডাতে একদম সিটি সেন্টারেই খ্রিষ্টোফার কলম্বাস এর নামে একটা রোড আছে। আর যেহেতু খ্রিষ্টোফার কলম্বাস খৃষ্টধর্মের জন্য এত কষ্ট করেছে, তাই “সেইন্ট” খ্রিষ্টোফার কলম্বাসকে এত সম্মানের সাথে কবর দেয়া হয়েছে মসজিদে, থুক্কু, ক্যাথেড্রালে। এবং খ্রিষ্টোফার কলম্বাসের ইচ্ছাকে সম্মান দেখিয়ে, তাকে মাটির উপরেই কবর দেয়া হয়েছে।
এখনো যখন গোঁড়া খৃষ্টানরা লম্বা ট্রাভেলে যায়, অনেক দূরের জার্নিতে যায়, তাড়া সেভিয়্যা গ্র্যান্ড মস্ক, ধ্যাত্তেরী, আবার থুক্কু, ক্যাথেড্রালে এসে খ্রিষ্টোফার কলম্বাসের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করে যেন “সেইন্ট” খ্রিষ্টোফার কলম্বাস তাদের জার্নিকে আশীর্বাদ করে!